তবলা ধরতে শেখা : বিশ্বজুড়ে, বাদ্যযন্ত্র শেখার প্রথম পাঠ হয় যন্ত্র ধরতে শেখা। যন্ত্র নিয়ে বসা এবং যন্ত্র ধরার শৈলী এতটাই গুরুত্তপুরন যে, এখানে ভুল হয়ে থাকলে শেখার অভিজ্ঞতা হতে পারে অনেক বেশি কঠিন। তবলা নিয়ে বসা, তবলা ধরা কিংবা হাত রাখতে শেখার ক্ষেত্রেও এর ব্যাতিক্রম না।
এ অঞ্চলের শুদ্ধ সংগীতে “ঘরানা” কথাটি প্রায়ই শোনা যায়। “ঘর” থেকে আসা “ঘরানা” দিয়ে সাধারনত একটা নির্দিষ্ট শৈলীকে বঝানো হয়, যা হয়ত কোন বিক্ষ্যাত .ঘর/পরিবারের সাঙ্গেতিক বৈশিষ্ট।

[ পর্ব ২: তবলা ধরতে শেখা ]
তবলার ক্ষেত্রে, এমন “ঘরানা” মূলত ৬ টি। বেনারস, দিল্লি, আজড়ারা, ফারুকাবাদ, পাঞ্জাব এবং লাকনাউ ঘরানা। বাদনশৈলীর ভেদাভেদ ছাড়াও, আওয়াজ এবং বসার উপায় ও এই ৬ ঘরানার মধ্যে আলাদা।
মূলত, ফারুকাবাদ ঘরানা নিয়েই আমাদের আলোচনা।
ফারুকাবাদ তবলার বাদনশৈলীর মূল মন্ত্র, কম জায়গায় সর্বোত্তম আওয়াজ।
তবলা নিয়ে বসার আগে, কোন হাতে কোন তবলা টা বাজবে, তা ঠিক করে নেয়া দরকার। সাধারনত ডায়না ডান হাতে এবং বায়া বাম হাতে বাজলেও, প্রাকৃতিক ভাবে যারা বাম হাতি, তাদের ক্ষেত্রে তবলার ধরার নিয়মটাও উল্টে যাবে। অর্থাৎ, বায়া ডান হাতে এবং ডায়না বাম হাতে।

তবলা ঠিক কতটুকু সামনে রেখে বসতে হবে তা নিয়ে খুব কঠিন কোন হিসাব নেই। শরীরের মাপ অনুযায়ী স্বাভাবিক দুরুত্তে তবলা রাখলেই হবে। বায়া কে বা’হাটু (বা’হাতি দের ক্ষেত্রে ডান হাটু) বরাবর রেখে আনুমানিক ৪-৬ ইঞ্চি দুরত্তে রাখলে এটাকে স্বাভাবিক বলা যায়। যেকোনো যন্ত্রের ধরার নির্দিষ্ট কায়দা থাকলেও, সেটা পরবর্তীতে প্রায়ই যন্ত্রশিল্পীরা নিজেদের সুবিধার্থে পরিবর্তন করে নেন। তবলার ক্ষেত্রে এর ব্যাতিক্রম না হলেও, শুরুতে একটা গত বাধা নিয়ম মেনে গেলে ভুল ত্রুটির সম্ভাবনা কমে যায়।

তবলা শিক্ষার শুরু থেকেই সঠিক ভাবে হাত রাখার চেষ্টা করা খুবি গুরুত্বপূর্ণ। ফারুকাবাদ ঘরানার তবলা শিল্পীরা, এমন একভাবে ভাবে হাত রাখেন যেনো হাতের ওজন কাঁধের পেশীতে না রেখেও দীর্ঘক্ষণ তবলা বাজানো যায়।
মূলত, দুই হাতের এর কাধ, কনুই এবং কবজির নিয়ন্ত্রন শেখাই প্রথমদিকের অনুশীলনগুলোর মূল লক্ষ থাকে। আপাতত, স্বাভাবিক দুরত্তে তবলা জোড়া রেখে, তবলার ময়দান থেকে খানিকটা উচু করে কবজি রাখলেই শুরু করার জন্য ভাল। বায়ার ক্ষেত্রে, হাতের তালুর ঠিক মাঝখানে তবলার “গাব” বা “সিহাই’ বসবে, এবং ডায়না তে হাতের উপরের ভাগ (পাঞ্জা থেকে আঙুলের শুরু) বসবে গাব এর ঠিক মাঝ বরাবর।

বাজনার সুবিধার্থে, শিল্পীদের মধ্যে তবলা সামনের দিকে কিছুটা ঝুঁকিয়ে রাখতে দেখা যায়। কে কতটুকু ঝুঁকিয়ে বাহ সামনের দিকে কাত করে রাখবে, সেটা ব্যাক্তিগত সুবিধার বেপার হলেও, অন্তত শুরুতে খুব বেশি কাঁত না করে চোখে স্বাভাবিক লাগে অতটুকু বাকিয়ে রাখাই নিরাপদ।
তবলা গুরুকুলের দ্বিতীয় পর্বেটিতে খুব সহজভাবে তবলা নিয়ে বসতে শেখালেন রতন কুমার দাস। দেখার আমন্ত্রণ রইল।
তবলা শিক্ষার যাত্রা শুভ হোক!
আরও পড়ুন: