আজক আমাদের আলোচনার বিষয় হস্ত সাধনার নিয়ম বা পদ্ধতি
হস্ত সাধনার নিয়ম বা পদ্ধতি
তলায় হস্ত সাধনার বা হাত সাধার কতকগুলি সাধারণ নিয়ম বা পদ্ধতি আছে । এর জন্য কয়েকটা বিশেষ-বিশেষ বোল-বাণীও আছে। প্রথম শিক্ষার্থীর হপ্ত সাধনার নিয়ম আর অনেকদিন যাবৎ তৰলা বাজাচ্ছেন, এরকম ব্যক্তির হস্ত সাধনার নিয়ম এক হতে পারে না । যাই হোক, এখানে প্রথম শিক্ষার্থীর হস্ত সাধনার কথাই বলবো :-
যে কোনো ‘ৰোল’ তলায় রেওয়াজ করবার সময় প্রথমে একহারা লয়ে ( বিলম্বিত বা ঠায় লয় ) বাজাতে হয় । তৰলায় যেন হাত বেশ ঠাস্ হয়ে বসে থাকে। হাত হাল্কা করে তবলা রেওয়াজ করলে ভবিষ্যতে হাতের ভার থাকে না। এদিকে বিশেষ নজর রাখা উচিত ৷ যে কোনো ‘বোল’ এক-এক লয়ে অন্ততঃ পক্ষে বিশ-ত্রিশ মিনিট ধীরে ধীরে বাজাতে হয় । তারপর একটু একটু করে লয় বাড়িয়ে দিয়ে ঐ বোলটা বাজানো দরকার।
এইসব লয়েও অন্ততঃ ৰিশ-ত্রিশ মিনিট একভাবে বাজানো চাই । এইভাবে একটু একটু করে লয় ৰাড়িয়ে হাত সাধতে সাধতে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে দেখতে পাবেন—ঐ জিনিসটা খুব দ্রুতগতিতে আপনা হতেই ৰাজছে। তখন নিজের কানেই ৰোলটা শুনে আপনার খুব ভালো লাগবে। হজসাধনা বা রেওয়াজ করার মধ্যে নিষ্ঠা, অধ্যবসায় এবং নিজের উপর দৃঢ় প্রত্যয় থাকা চাই।
আত্মবিশ্বাসটা সমস্ত প্রকার সাধনার পক্ষে পরম মূল্যবান বস্তু । এই জিনিসটার অভাব হলে সাধনা সফল হতে পারে না। কাজে-কাজেই, তবলার শিক্ষার্থীদের আত্মপ্রত্যয় যাতে আসে, তারজন্ত যথারীতি সংযম এবং শৃঙ্খলা পালন করতে হবে। সংযম এবং শৃঙ্খলাবোধ এমনিতেই আসে না, এরও অনুশীলন করতে হয়। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতে সাফল্য কামনা করতে হ’লে, গভীর নিষ্ঠা এবং বিনয় থাকা চাই।
উদ্ধত আচরণ যা হামবড়াই ভাৰ থাকলে নিজেকেই তুষ্ট করা চলে, উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের প্রাণকেন্দ্রের দ্বারেও উপনীত হওয়া যায় না । আত্মপ্রত্যয় ও হামড়াই-ভাব এক কথা নয় । এ দুটোর মধ্যে অনন্ত ব্যবধান। যেমন অপার অনন্ত ব্যবধান আকাশ আর পাতালের মধ্যে। উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত অপার। এর কোনো মাপকাঠি নেই।
আমরা যতটুকু শিখতে পারি, জানতে পারি, সেটুকু এই সঙ্গীতের অনন্ত পরিধির তুলনায় তুচ্ছ। তবু একথা বলতে বাধা নেই —যতটুকু শিখবো আমরা, ততটুকুই যেন সর্বাঙ্গ সুন্দর হয়।
তবলা বাদ্যযন্ত্রটা সম্পূর্ণ আঙুলের বাজনার উপর নির্ভর করে। বড় “ধেরেধেরে” বড় “তেরেতেরে” আর বড় “ধেরেকেটে” – “তেরেকেটে” ছাড়া সবই প্রায় আঙুলের সাহায্যে বাজে। সূক্ষ্ম কাজ তবলায় করতে হ’লে, তর্জনী ও মধ্যমার ব্যবহার হয় অধিক মাত্রায়। দিল্লী, ফরাক্কাবাদ ( প্ররববাজ ) প্রভৃতি ঘরাণার তবলা বাজনা এই শ্রেণীর মধ্যে পড়ে। কাজেই বিকৃতভাবে আঙুল চালনা করলে, হস্ত সাধনার সমস্ত প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়।
এবং ভবিষ্যতে সেই বিকৃত ভাবটা আর সংশোধন করা সম্ভব হয় না। তবলার উপর দক্ষিণ হস্তের চারটা আঙুল এমনভাবে আয়ত্বের মধ্যে রাখতে হবে, যাতে ক’রে, কোনো মতেই ‘অনামিকা’ আর ‘কনিষ্ঠ।’ আঙুল দুটা তবলা থেকে উঠে না যায়। ‘মধ্যমা তবলা থেকে ঈষৎ উপর দিকে থাকবে। সুষ্ঠুভাবে এবং ধৈর্যের সঙ্গে মাস তিনেকের সতর্কতায় ধীরে ধীরে হস্ত সাধনায় একহারা লয়ে ( বিলম্বিত বা ঠায়ে ) বোল ৰাজালে হাতের আঙ ল ঠিকমতো বসে যায় তবলায় ।
তবলায় হস্ত সাধনার প্রধান বন্ধ হলো—‘কায়দা’ । এই কায়দা ঠিকমতো বাজালে তবলায় সুষ্ঠুভাবে হাত বসতে বাধ্য ‘কায়দা” আবার ভাঙতে হয়—মানে পাট করতে হয়। “কায়দা” ভাঙা খুব ভালভাবে অভ্যাস করলে’ হাত সুন্দররূপে তৈরী হয়ে যায় । বাঁয়া বাজানো তবলার থেকে শক্ত।
বাঁ হাত বাঁয়ার উপর কব্জির চাপ দিয়ে বুলিয়ে বাজাতে হয়। আঙুলগুলি সাপের কণার মতো থাকবে। বাঁয়া বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ ছাড়া অন্য চারটা আঙলেও বাজে । তবে এতে সবচেয়ে বেশী প্রয়োগ হয় মধ্যমা ও তর্জনী ।
আরও দেখুন :